ঢাকা ০৩:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অশ্রুসিক্ত নয়নে ছোট ভাইকে শেষ বিদায় জানালেন রাষ্ট্রপতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৩৭:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জুলাই ২০২০
  • ১৬৬ বার
হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১টার দিকে ঢাকার সম্মিলিক সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছোট ভাই ও তার সহকারী একান্ত সচিব মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. আবদুল হাই। রোববার স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছোট ভাইয়ের নামাজে জানাজায় অংশ নেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এদিন বাদ আসর মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত তার দ্বিতীয় ও শেষ জানাজা শেষে অশ্রুসিক্ত নয়নে ভাইকে বিদায় জানান রাষ্ট্রপতি।

এ জানাজায় আরও উপস্থিত ছিলেন- রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মো. শামীমুজ্জামান, প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন ও পরিবারের সদস্যরা। জানাজা পরিচালনা করেন- রাষ্ট্রপতির ছোট ছেলে ব্যরিস্টার রিয়াদ আহমেদ তুষার। দোয়া পরিচালনা করেন কামালপুর জামে মসজিদের ইমামা মাওলানা আবু তাহের সিদ্দিকী।

পরে কামালপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবা হাজী মো. তায়েব উদ্দিন, মা তমিজা খাতুন, বড়ভাই মো. আবদুল গণি ও ছোটভাই হাজী মো. আবদুর রাজ্জাকের কবরের পাশে আবদুল হাইকে সমাহিত করা হয়। এ সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন অশ্রুসজল। রাষ্ট্রপতির কান্না কাঁদিয়েছে উপস্থিত অন্যদেরও।

এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. আবদুল হাইয়ের মরদেহ মিঠামইনে আনা হয়। উপজেলা হেলিপ্যাডে হেলিকপ্টার থেকে কফিন নামানোর পর একটি গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় পাশেই অবস্থিত মুক্তিযাদ্ধা আবদুল হক সরকারি কলেজ মাঠে। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন হাজারো শোকাহত মানুষ।

মাঠের পশ্চিমপাশের মঞ্চে কফিন রাখার সময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়রা অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর প্রয়াত এই মুক্তিযোদ্ধার কফিন ঢেকে দেওয়া হয় লাল-সবুজের পতাকায়। গার্ড অব অনারের মাধ্যমে প্রদান করা হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। এরপর তার কফিনে ফুল দিয়ে শেষশ্রদ্ধা নিবেদন করেন সর্বস্তরের মানুষ। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. আবদুল হাইয়ের কফিনে শ্রদ্ধা জানান- কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব-উল ইসলাম, কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপারের পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও পিপি শাহ আজিজুল হক, ইটনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ ওমান খান প্রমুখ।

বেলা পৌনে ৩টায় সেখানে অনুষ্ঠিত প্রথম জানাজার আগে পরিবারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপি, রাষ্ট্রপতির ছোট বোন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আছিয়া আলমের ছেলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ নেহাল আহম্মেদ তরুণ ও রাষ্ট্রপতির ছোট ভাই প্রয়াত হাজী মো. আবদুর রাজ্জাকের ছেলে সদর ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শরীফ কামাল মরহুমের আত্মার শান্তি কামনায় এলাকাবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে বক্তব্য রাখেন।

এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপি বলেন, ‘আমার চাচা একজন সহজ-সরল ও সাদা মনের মানুষ ছিলেন। ওনার মৃত্যু আমরা এখনও মেনে নিতে পারছি না।’ এসময় কেঁদে ফেলেন তিনি। এমপি তৌফিক চাচা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন। সেখান অনুষ্ঠিত প্রথম জানাজা পরিচালনা করেন মাওলানা ইয়াকুব আলী বরুনী। এরপর মরহুমের কফিনবন্দী মরদেহ কামালপুর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

বিকেল ৪টা ৫মিনিটে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে মিঠামইনে আসেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। হেলিপ্যাডে প্রেসিডেন্টকে গার্ড অব অনার প্রদানের পর তিনি মিঠামইন থানা পুলিশের একটি গাড়িতে করে কামালপুর গ্রামের বাড়িতে যান। প্রেসিডেন্টের সফরসূচি অনুযায়ী, সোমবার বিকেল ৫টায় রাষ্ট্রপতি হেলিকপ্টারে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।

করোনা উপসর্গ দেখা দিলে গত ২ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় তার কোভিড-১৯ পজেটিভ আসে। পরে গত ৫ জুলাই তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউ’তে স্থানান্তর করা হয়। গত ১২ জুলাই তাকে ভেনটিলেশনে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১টায় তার মৃত্যু হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অশ্রুসিক্ত নয়নে ছোট ভাইকে শেষ বিদায় জানালেন রাষ্ট্রপতি

আপডেট টাইম : ১২:৩৭:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জুলাই ২০২০
হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১টার দিকে ঢাকার সম্মিলিক সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছোট ভাই ও তার সহকারী একান্ত সচিব মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. আবদুল হাই। রোববার স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছোট ভাইয়ের নামাজে জানাজায় অংশ নেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এদিন বাদ আসর মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত তার দ্বিতীয় ও শেষ জানাজা শেষে অশ্রুসিক্ত নয়নে ভাইকে বিদায় জানান রাষ্ট্রপতি।

এ জানাজায় আরও উপস্থিত ছিলেন- রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মো. শামীমুজ্জামান, প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন ও পরিবারের সদস্যরা। জানাজা পরিচালনা করেন- রাষ্ট্রপতির ছোট ছেলে ব্যরিস্টার রিয়াদ আহমেদ তুষার। দোয়া পরিচালনা করেন কামালপুর জামে মসজিদের ইমামা মাওলানা আবু তাহের সিদ্দিকী।

পরে কামালপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবা হাজী মো. তায়েব উদ্দিন, মা তমিজা খাতুন, বড়ভাই মো. আবদুল গণি ও ছোটভাই হাজী মো. আবদুর রাজ্জাকের কবরের পাশে আবদুল হাইকে সমাহিত করা হয়। এ সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন অশ্রুসজল। রাষ্ট্রপতির কান্না কাঁদিয়েছে উপস্থিত অন্যদেরও।

এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. আবদুল হাইয়ের মরদেহ মিঠামইনে আনা হয়। উপজেলা হেলিপ্যাডে হেলিকপ্টার থেকে কফিন নামানোর পর একটি গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় পাশেই অবস্থিত মুক্তিযাদ্ধা আবদুল হক সরকারি কলেজ মাঠে। সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন হাজারো শোকাহত মানুষ।

মাঠের পশ্চিমপাশের মঞ্চে কফিন রাখার সময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়রা অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর প্রয়াত এই মুক্তিযোদ্ধার কফিন ঢেকে দেওয়া হয় লাল-সবুজের পতাকায়। গার্ড অব অনারের মাধ্যমে প্রদান করা হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। এরপর তার কফিনে ফুল দিয়ে শেষশ্রদ্ধা নিবেদন করেন সর্বস্তরের মানুষ। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. আবদুল হাইয়ের কফিনে শ্রদ্ধা জানান- কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব-উল ইসলাম, কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপারের পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও পিপি শাহ আজিজুল হক, ইটনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ ওমান খান প্রমুখ।

বেলা পৌনে ৩টায় সেখানে অনুষ্ঠিত প্রথম জানাজার আগে পরিবারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপি, রাষ্ট্রপতির ছোট বোন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আছিয়া আলমের ছেলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ নেহাল আহম্মেদ তরুণ ও রাষ্ট্রপতির ছোট ভাই প্রয়াত হাজী মো. আবদুর রাজ্জাকের ছেলে সদর ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শরীফ কামাল মরহুমের আত্মার শান্তি কামনায় এলাকাবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে বক্তব্য রাখেন।

এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপি বলেন, ‘আমার চাচা একজন সহজ-সরল ও সাদা মনের মানুষ ছিলেন। ওনার মৃত্যু আমরা এখনও মেনে নিতে পারছি না।’ এসময় কেঁদে ফেলেন তিনি। এমপি তৌফিক চাচা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন। সেখান অনুষ্ঠিত প্রথম জানাজা পরিচালনা করেন মাওলানা ইয়াকুব আলী বরুনী। এরপর মরহুমের কফিনবন্দী মরদেহ কামালপুর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

বিকেল ৪টা ৫মিনিটে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে মিঠামইনে আসেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। হেলিপ্যাডে প্রেসিডেন্টকে গার্ড অব অনার প্রদানের পর তিনি মিঠামইন থানা পুলিশের একটি গাড়িতে করে কামালপুর গ্রামের বাড়িতে যান। প্রেসিডেন্টের সফরসূচি অনুযায়ী, সোমবার বিকেল ৫টায় রাষ্ট্রপতি হেলিকপ্টারে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।

করোনা উপসর্গ দেখা দিলে গত ২ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় তার কোভিড-১৯ পজেটিভ আসে। পরে গত ৫ জুলাই তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউ’তে স্থানান্তর করা হয়। গত ১২ জুলাই তাকে ভেনটিলেশনে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১টায় তার মৃত্যু হয়।